default | grid-3 | grid-2

Post per Page

টুনটুনির কুলখানি

তখন আমি পোলাপান টাইপের কিছু একটা। প্রাইমারি স্কুলের গন্ডি পাড় হইনি।
একটু অতিরিক্ত রকমের ভদ্র ছিলাম।
স্কুল থেকে ফিরে কয়েকজন সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে খেজুর গাছের তলায় গেলাম খেজুর পাড়তে। খেজুরের ডালে একটা টুনটুনি বসেছিল।
ভদ্রতা দেখিয়ে তার দিকে ঢিল ছুড়লাম। দুর্ভাগ্যবশত ঢিলটা তার গায়ে লাগলো।
কে জানতো যে তার জীবনকাল তখনই শেষ হয়ে যাবে।
সকলে জড়ো হলাম মরা টুনটুনির চারপাশ ঘিরে। কারো মুখে হাসি, কারো আবার মন খারাপ।
পরিস্থিতি পালটে দিলাম নিমেষেই। সবাইকে জানালাম, এই মরা টুনটুনির জন্যে আমাদের কান্না করা উচিত।
সকলেই একটু থ মেরে গেলাম।
ইছু বললো, কান্না তো আসে না। কিভাবে কাঁদবো?
আমাদের মাঝে সবথেকে ফাজিল মহোদয় সহসাই কান্নার অভিনয় শুরু করে দিলো। সে কি কান্না রে ভাই... বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।
ফাজিল মহোদয়ের নাম নীরব। মেজো কাকার মেজো শালা। সেদিক থেকে সম্পর্কে তিনি আমার মামা।
নাম নীরব হলেও বদের হাড্ডি। সে এখন এক মেয়ের বাবাও হয়েছেন। আমি তাকে রাঙা শশুর ডাকি।
কান্নার পর্ব শেষে সিদ্ধান্ত নিলাম, টুনটুনিকে কবর দিতে হবে।
জানাজা পড়ালেন নীরব মামা।
দাফন শেষে যে যার বাড়ি ফিরে গেলো।
পরেরদিন খেলার সময় কেউ একজন বললো, এখন গুন্ডা-পুলিশ খেলার পালা। সবাই সেই প্রস্তাবে সাড়া দিলো।
সিদ্ধান্ত নেয়া হলো ভিন্নরকম ভাবে। "হীরু যেহেতু টুনটুনি মেরেছে, হীরুকেই গুন্ডা হতে হবে। খেলার শুরুতে হীরু লুকিয়ে থাকবে, পরে তাকে খুঁজে বের করে শাস্তি দেয়া হবে।"
গাধার মতো রাজি হয়ে গেলাম।
গেইম প্লান অনুযায়ী খুঁজে বের করে আমাকে কলার পাতা দিয়ে জাম গাছের সাথে বাঁধা হলো।
বেঁধেই মার শুরু... উহ...!!!
শালার পোলাপান মনেহয় ভুলেই গিয়েছিলো যে ওটা নিছক একটা খেলা ছাড়া আর কিছুই না।
যাই হোক... কিছুদিন পরে ফিরে এলো চল্লিশার দিন।
আশেপাশের ছেলেমেয়েরা জড়ো হলাম। সবার বাসা থেকে অল্প অল্প চাল, তেল মশলা আনা হলো। মাছ ধরলাম পাশের ছোট খাল থেকে।
রাহিমা ভালো রান্না পারে। তিন্নী, মুন্নী তাকে সাহায্য করলো রান্নার কাজে।
সেদিনের কুলখানির মাধ্যমে টুনটুনির ইতিহাস শেষ হলেও আজ কেন জানি আবার মনে পড়ে গেলো।
মনে পড়ে গেলো নীরব মামা, বাদল, রাহিমা, ইছু, তিন্নী, মুন্নী সহ সবাইকে।
স্মৃতিগুলো আসলেই বড় অদ্ভুত... কখন যে কাকে কতদূর থেকে মনের মাঝে নিয়ে আসে, বোঝা মুশকিল...

No comments

Error Page Image

Error Page Image

Oooops.... Could not find it!!!

The page you were looking for, could not be found. You may have typed the address incorrectly or you may have used an outdated link.

Go to Homepage