default | grid-3 | grid-2

Post per Page

একজন দুঃখিনী মা... এবং একটি আর্তচিত্কার !!!


বাপজান…
অনেকদিন হলো, তোকে দেখিনা। ইচ্ছা হলেও যাওয়া হয়না তোর কাছে।
শুনেছি, তুই খুব ভালই আছিস।
একথা শুনে খুশি আমিও।
তুই সুখে থাকবি বলেই তো আমি আজ তোর থেকে অনেক দূরে। সেই যে তাড়িয়ে দিলি, ফেরা হলোনা আর। বয়সের ভরে শরীরটা নুয়ে গেছে।
খুব ইচ্ছা ছিল, জীবন মৃত্যুর এই সন্ধিক্ষণে তোকে সাথে নিয়ে থাকবো। শান্তিতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করবো তোর সাজানো ঘরে। জীবনের শেষ পথটুকু গিয়ে থামবে তোর আঙিনায়। তাইতো তোকে দশটি মাস পেটে আগলে রেখেছি সহস্র আশায়। তোর আগমনের প্রতীক্ষায় নির্ঘুম কাটিয়েছি প্রত্যেকটি প্রহর। শত কষ্ট সয়ে তোকে বড় করেছি খুব যতনে।
তোর মনে পড়ে?
সামান্য জ্বরেও তোর পাশে জেগে থেকেছি সারারাত। অশ্রু ঝরলেও কখনো বুঝতে দেইনি তোকে একটিবারের জন্য।
ইদানীং আমার শরীর টা খুব খারাপ যাচ্ছে। শুনেছি আমার অনেক বড় অসুখ। আজ তোকে পাশে না পেয়ে অসুখের দ্বিগুণ কষ্ট অনুভব করছি।
তবুও একটা সান্ত্বনা মনে… আমার বাজান তো খুব ভাল আছে।

বাপজান…
তুই ঠিক মত খেতে পারছিস তো?
গরীব ছিলাম, ভাল খাবার খেতে দিতে পারিনি। কখনো কখনো তোর ক্ষুধার অন্ন প্রস্তুত রাখতাম নিজে না খেয়ে।
এখনো আমি না খেয়ে থাকি। তোর কথা মনে হলে ভাতের থালা সামনে থেকে সরিয়ে রাখি।
কতদিন তোর মুখখানা দেখিনা। খাবার সময় শুনিনা তোর মুখে "মা" নামের মধুর ডাক।
তুই তাড়িয়ে দেয়ার পর এক বাড়িতে কিছু ভাত চেয়েছিলাম, পাইনি। তাড়িয়ে দিয়েছিলো দুরদুর করে।
ক্ষুধার যন্ত্রণায় পথের ধারে মুখ থুবড়ে পড়ে ছিলাম। তোরই মত একটি ছেলে আমাকে এখানে নিয়ে আসলো।
এখানে ইচ্ছা হলেও পেট পুরে খেতে পাইনা। তারপরও একটু স্বস্তি পাই মনে, আমার বাজান তো পেট পুরে খেতে পায়।

বাপজান…
তুই ঘুমাও তো ঠিকমত?
তখন খুব গরীব ছিলাম। নরম বিছানায় তোকে ঘুমাতে দিতে পারিনি। শক্ত বিছানায় তোর ঘুম আসতো না, বুকের উপর তোকে সুইয়ে দিতাম। পরক্ষণেই তুই ঘুমিয়ে যেতি।
তোর ঘুম ভাঙার ভয়ে একটুও নড়তে পারতাম না। কখনো সারারাত জেগে থাকতাম তোকে বুকে আগলে রেখে।
এখনো জেগে থাকি। পাঁজরের হাড় অকেজো হয়ে গেছে। শক্ত বিছানায় ঘুম আসেনা।
তবুও সান্ত্বনা মনে… আমার বাজান তো সুখে আছে।

বাপজান…
ঘরের পাশে নারিকেল গাছটা কিরকম আছে? নিশ্চয়ই অনেক বড় হয়েছে, তাই না?
তোর হয়ত মনে নেই। ঘরে তখন কোন খাবার ছিলোনা। গাছ তলায় কুড়িয়ে পাওয়া একটি নারিকেল, যখনই কাটতে যাবো, তখনি তুই বায়না ধরলি, সেটাকে রোপণ করবি বলে। তোর হাসিমাখা মুখটির জন্য ক্ষুধার যন্ত্রণা চাপিয়ে রেখেছিলাম।
অনেক দিন হয়ে গেল, তোর বাপজানের কবরটা দেখিনা।
বাড়ি ফেরার অচেনা মায়ার সাথে যুদ্ধ করে আর পারছিনা বাপজান।
বৃদ্ধাশ্রমের চার দেয়ালে দম বন্ধ হয়ে আসছে।
আমায় তুই ফিরিয়ে নে বাপজান।
কথা দিচ্ছি, তোর কাছে বেশিদিন থাকবো না। নতুন পৃথিবী আমায় হাতছানি দিয়ে ডাকছে। অধীর অপেক্ষায় আছে তোর বাবা। খুব শিগগিরই তার কাছে চলে যাবো। কোনদিনও আমার ছায়া ভেসে উঠবেনা তোর সাজানো আঙিনায়…

No comments

Error Page Image

Error Page Image

Oooops.... Could not find it!!!

The page you were looking for, could not be found. You may have typed the address incorrectly or you may have used an outdated link.

Go to Homepage